বাংলাদেশ পুলিশের একমাত্র অবশিষ্ট কনটিনজেন্টকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কনটিনজেন্টের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৮০ সদস্যের যার মধ্যে ৭০ জন নারী পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা আগামী নভেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরে আসবেন। মাত্র দুই মাস আগে এই কনটিনজেন্টের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের একমাত্র মহিলা পুলিশ ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছিল।এ সিদ্ধান্তে বৈশ্বিক শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের পুলিশের দীর্ঘদিনের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। পুলিশের প্রথম মিশন ছিল নামিবিয়ায়। ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ২১ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা বিশ্বজুড়ে ২৪টি দেশে ২৬টি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ সুদান ও মধ্য আফ্রিকা। একমাত্র বাংলাদেশেরই পুরো কনটিনজেন্ট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ক্যামেরুন, সেনেগাল ও মিশরের মতো দেশের কনটিনজেন্ট আংশিকভাবে হ্রাস করা হবে। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র অনুযায়ী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে চলমান অর্থ সংকটের কারণেই এই সদস্যসংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, জাতিসংঘের বাজেট সংকোচন ও সংস্থার জনবল কমানোর নীতির কারণে বাংলাদেশের এফপিইউ ইউনিটকে নভেম্বরের মাঝামাঝি দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাঁচ বছর আগে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করা আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের কূটনৈতিক দুর্বলতাকেই প্রকাশ করছে। তিনি বলেন, “জাতিসংঘ সাধারণত সদস্যসংখ্যা কমালে তা সব দেশের ক্ষেত্রেই আংশিকভাবে প্রযোজ্য হয়। কিন্তু এবার পুরো বাংলাদেশ এফপিইউকে নভেম্বরের মধ্যে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি পুলিশের জন্য যেমন হতাশার, তেমনি জাতির জন্যও। সরকারের উচিত ছিল জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনায় যাওয়া।”
এক নারী সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “সরকারের সক্রিয় উদ্যোগের অভাবে আমাদের পুলিশ এখন পুরোপুরি কোণঠাসা অবস্থায়, জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারছে না। অথচ নারী এফপিইউর ভূমিকা কেবল পুলিশের অর্জন নয়—এটি জাতীয় গৌরব, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরে। এটি ঠিক করতে হলে সরকারকে এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।”