কন্ট্রাকচুয়াল সার্ভিস বা থার্ড পার্টি সার্ভিস বলতে বোঝায় এমন ধরনের চুক্তিভিত্তিক বা ভাড়া নেওয়া কর্মচারী বা সার্ভিস প্রদানকারী যারা মূল প্রতিষ্ঠান বা নিয়োগকারীর সরাসরি কর্মচারী নয়, বরং অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত। এই ধরনের কর্মীদের সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সাধারণ কাজের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়, যেমন দারোয়ান, ক্লিনার, চালক, পিয়ন, গার্ড ইত্যাদি।
বেনিয়া বা বণিকদের মত, বাংলাদেশে আনাচে কানাচে প্রায় সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান (ব্যাংক ও নন-ব্যাংক) বা বিদেশী কোম্পানিগুলো থার্ড পার্টি সার্ভিস বা কন্ট্রাকচুয়াল সাপোর্ট স্টাফ নামে আরেক ধরনের আধুনিক দাস প্রথা চালু করেছে। পিয়ন, দারোয়ান, মালি, ক্লিনার, ড্রাইভার, সিকিরিউটি গার্ড বিভিন্ন পদে কন্ট্রাকচুয়াল যুবকদের নিয়োগ দেয়া হয়। এমনকি অফিসার সমমানের দায়িত্ব চাপিয়ে কন্ট্রাকচুয়াল লেবাসে বছরের পর বছর কুলুর বলদের মতো খাটিয়ে নিচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কন্ট্রাকচুয়ালদের কোন অবসর ভাতা হিসেবে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি বা পেনশন নাই। ফলে যৌবনের রস নিংড়ে প্রতিষ্ঠানকে দেয় । তাও আবার নাম মাত্র বেতনে। যখন তারা বৃদ্ধ হয়ে অবসরে যায় তখন ছোবড়া নিয়ে বাড়ী ফেরে। ধুকে ধুকে জীবন কাটায়। এদের ছুটি বলতেও কিছুই নাই। প্রায়শ: এটিএম বুথের গার্ডরা ছুটি পায় না। এক এটিএম বুথের বয়স্ক গার্ড বললো বাড়ী যায় না ৮ বছর। নাতি হয়েছে কিন্তু একদিনও কোলে নিতে পারে নাই। কখনও কখনও কেউ যদি ছুটি পায় তা নানা টেবিলে অনুমোদন নিতে হয়।
দাস প্রথার সঙ্গে এই কন্ট্রাকচুয়াল সার্ভিসের তুলনা করা হয় কারণ:
- এই কর্মীরা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা, অবসর ভাতা, পেনশন বা গ্রাচুইটির সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকেন।
- তাদের কাজের সময়কাল অনেক ক্ষেত্রে ১০-১৬ ঘণ্টা হয় এবং কাজের জন্য উপযুক্ত অবসর বা সুবিধা পান না।
- তাদের জীবন ও জীবনযাত্রার মান খুবই অমানবিক এবং অমানবিক শর্তে কাজ করতে বাধ্য করা হয়।
- কখনো কখনো তাদের সাথে প্রতারণা বা অবিচার হয়, যেমন কাজের দায়িত্বের সাথে মিল না থাকা কাজ দেওয়া বা নানা অপমানের শিকার হওয়া।
এছাড়া অনেক অফিসে কন্ট্রাকচুয়াল নিয়োগ দেয়া হয়েছে অফিসের পিওন হিসেবে কিন্তু কাজে লাগানো হচ্ছে ক্লিনার হিসেবে। নারী কন্ট্রাকচুয়ালদের অবস্থা আরো খারাপ। ছাপানোর অযোগ্য । এটাও এক ধরনের প্রতারনা বা দাস প্রথার গোপন আচরন। অমানবিক। প্রসঙ্গত: চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী ছাড়া প্রতিষ্ঠান চলে না। অথচ তাদের প্রতি খারাপ আচরন করা বা খারাপ আচরনের মনোভাব প্রকাশ যেন র্উদ্ধত্বনের অধিকার। এদের কাজ মোটামুটি ১০ থেকে ১৬ ঘন্টা। অথচ তাদের টয়লেট করার ভাল ব্যবস্থা থাকে না। ইন্টারনেট কানেকশন দেয়া হয় না। বসার স্থান নেই। অফিসের কাজে নিজ মুঠো ফোন ব্যাবহার করলেও তারা বিল দেয়ার কোন ব্যবস্থা থাকে না।
বাংলাদেশের ফোন কোম্পানিগুলো এ ধরনের দাস প্রথা চালু করার উদ্ভাবক বলে অনেকে মনে করেন । কন্ট্রাকচুয়াল নামে দাস প্রথা হলে কোম্পানি লাভবান হবে, এমনই ধারনা বেনিয়া কোম্পানিগুলোর ম্যানেজমেন্টের। এই প্রফিট থিউরি পৃথিবীর ইতিহাসে বার বার ভুল প্রমানিত হয়েছে। কর্মী তো কর্মী সে যে পদমর্যাদার হোক না কেন। প্রতিষ্ঠান যদি কর্মীকে আপন না ভাবে, স্থায়ী না ভাবে, তাহলে কর্মী কখনও প্রতিষ্ঠানকে আপন ভাববে না, নিজের ভাববে না। কর্মী যদি প্রতিষ্ঠানকে নিজের না ভাবে তখন সেই প্রতিষ্ঠান বহুদুর যেতে পারে না, উন্নতি করতে পারে না। ব্যাংক ব্যাবসা হলো দীর্ঘমেয়াদি চলমান ব্যাবসা। সহজে এই ব্যাবসা যেমন চালু করা যায় না তেমনি সহজে গুটিয়ে নেয়া যায় না। কন্ট্রাকচুয়াল বা থার্ড পার্টি সার্ভিস দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন। কন্টাকচুয়াল বা র্থাড পার্টি কারনে অবসর ভাতাহীন একটা বড় দুর্বল বৃদ্ধ জনগোষ্ঠির জন্ম দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অচিরেই যা মানবাধিকার ও শ্রমের ন্যায্যতার বিরুদ্ধে । সেই সব বৃদ্ধ জনগোষ্টির পাশে কেউ থাকবে না। অথচ রাষ্ট্রের দায়িত্ব দুর্বল আইনগুলোকে সংস্কার করা, দুর্বলের পাশে থাকা, যাতে এই কর্মীদের যথাযথ মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত হয়।
জীবন সদস্য, ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, বাংলাদে
জীবন সদস্য, ব্যাংকার্স ক্লাব অব বাংলাদেশ
হেড অব ক্রেডিট লিগ্যাল, উত্তরা ফাইনান্স
01914009947