ঘটনা-১: একজন মায়ের আকুতি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ আসসালামু আলাইকুম, আমি একজন গৃহিণী। আমার ছেলের বয়স ১১+। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। কিন্তু দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে। ভয় পায় এখনো। অচেনা কারো সাথে কথা বলতে পারেনা ভিতরে ভয় কাজ করে। পড়াশুনায় ভালোই একেবারে খারাপ না, কিন্তু নিজের কোনো আগ্রহ নেই, আমার চেস্টায় যা হয়। কোনো কাজের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই, মোট কথা ওর আগ্রহ খুভই কম। আর বিষয়টা আমার বাড়ির আর কেউ ভালো ভাবে নিচ্ছে না।৷ যখনি কেউ কোনো কিছু করতে বলে হয়তো তাদের মন মতো আর ভালোভাবে গুছিয়ে করতে পারেনা তখনি হাজারটা কথা শুনতে হয় তাকে। আমিতো মা আমারতো খারাপ লাগে, কি করবো গুরুজন কিছু বলতেও পারিনা।”ওকে বলা হয় কোনো কিছু করার গুন নাই কি করে খাবা জীবনে” আর ওর মন মেজাজও এখন খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিছু বললে উত্তর দিয়ে দেয় । তাই এখন বেয়াদব। দয়া করে কেউ আমাকে বলবেন কি আমি কিভাবে ওর মনোযোগ আর আগ্রহ বাড়াবো? সবাই দোস ধরে ওরোতো কোন না কোনো ভালো গুন আছে সেটা কেউ প্রকাশ করে না শুধু ওর ভুল কোনটা সেইটা চোখে পরে সবার। আমি খুভই চিন্তায় আছি। .. .. .. ..
এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়, যেখানে একজন মা তার ছেলের মানসিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তার ছেলে, যিনি ১১ বছরের এবং সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে, কিছু মানসিক চাপ বা ট্রমার শিকার হয়েছে, যার কারণে তার আগ্রহ কমে গেছে, ভয় পায়, এবং অচেনা মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারে না। সেই সঙ্গে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পক্ষ থেকে নেতিবাচক মন্তব্য ও সমালোচনা তাকে আরও সমস্যায় ফেলে দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, কাজী মাহমুদুর রহমান সাইকোথেরাপিস্ট হিসেবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গাইডলাইন দিয়েছেন যা খুবই সহায়ক হতে পারে:
গাইডলাইন:
১) ইএমডিআর (EMDR) সাইকোথেরাপির সহায়তা:
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হল ইএমডিআর (Eye Movement Desensitization and Reprocessing) সাইকোথেরাপি গ্রহণ করা। এটি একটি বিশেষ থেরাপি, যা মানসিক ট্রমা কাটাতে সহায়তা করে। এই থেরাপির মাধ্যমে সন্তানের মনের আঘাতগুলো ধীরে ধীরে দূর হবে এবং তার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। এর ফলে তার মানসিক শক্তি ও বলিষ্ঠতা বাড়বে, এবং পরিবারের নেতিবাচক কথাবার্তা তাকে আর প্রভাবিত করতে পারবে না।
২) ইতিবাচক কাজগুলোর প্রশংসা করুন:
সন্তানের ভালো কাজগুলো খুঁজে বের করে তা প্রচার করুন। আপনার লেখায় তার ভালো গুণগুলোর উদাহরণ ছিল না, কিন্তু আপনাকে তার ভালো কাজগুলো চিহ্নিত করে তা তালিকাভুক্ত করতে হবে। এই তালিকাটি ঘরের কোথাও যেমন ড্রইং রুম বা দরজার কাছে লাগিয়ে রাখতে পারেন। প্রতিদিন জোরে জোরে পড়ে শোনানো, তার আত্মবিশ্বাস এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে। এতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠবে।]
৩) নেতিবাচক সমালোচনা বন্ধ করুন:
সন্তানের নেতিবাচক আচরণ নিয়ে আলোচনা করলে তার আচরণ আরও খারাপ হতে পারে। তাই সন্তানের ইতিবাচক আচরণগুলো নিয়ে আলোচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশেপাশের যারা শুধু নেতিবাচক সমালোচনা করে, তাদের থেকে সন্তানের মনোযোগ রক্ষা করুন এবং তাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিন। এতে সন্তানের মনোবল এবং ইতিবাচক মানসিকতা আরও শক্তিশালী হবে।
৪) মনোযোগ এবং আগ্রহের পুনর্নির্মাণ:
আপনার সন্তান পড়াশুনায় ভালো থাকলেও আগ্রহের অভাব অনুভব করছে, এজন্য তাকে মেধা এবং আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য এমন কিছু কাজের সাথে যুক্ত করুন যা তার স্বাভাবিক আগ্রহের সাথে সম্পর্কিত। সে যদি কোনো খেলাধুলায় আগ্রহী হয়, কিংবা সৃজনশীল কিছু করতে চায়, তাহলে তাকে সেই দিকটাতে উৎসাহিত করুন।
৫) ধৈর্য্য ও সহানুভূতি:
আপনি যতটা সম্ভব ধৈর্য ধরুন এবং সন্তানের প্রতি সহানুভূতি দেখান। তার সমস্যা বা মনোভাব নিয়ে বিচার না করে, তাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। এটা তার উপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে এবং সে আপনাকে আরও ভালোভাবে গ্রহণ করবে।
আপনার সন্তানের মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য এই পদক্ষেপগুলো খুবই কার্যকরী হতে পারে। আপনার চেষ্টা এবং সচেতনতা তার ভবিষ্যতের জন্য অনেক উপকারী হবে। আপনি যদি আরও বিস্তারিত জানাতে চান বা কোনো প্রশ্ন থাকে, আমি আপনাদের সাথে আছি! আপনার সন্তন ভালো থাকুক। সুখী হউক।
কাজী মাহমুদুর রহমান
ইএমডিআর সাইকোথেরাপিস্ট
হো: ০১৯১৪০০৯৯৪৭